প্রবাসের মাটিতে বৈশাখের সুর: নিউইয়র্কে উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর বর্ষবরণ ১৪৩২ উদযাপন
প্রজ্ঞা নিউজ ডেস্ক:
নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস যেন সেদিন রূপ নিয়েছিল বাংলার এক টুকরো গ্রামে। বাংলাদেশের মাটির গন্ধ আর বৈশাখের উচ্ছ্বাস নিয়ে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী যুক্তরাষ্ট্র সংসদ আয়োজন করে বর্ষবরণ ১৪৩২।
২৫ এপ্রিল ২০২৫, শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টায় সানাই পার্টি হলে আয়োজিত হয় বর্ণাঢ্য এই অনুষ্ঠান। প্রবাসের ব্যস্ত জীবনের মাঝেও বৈশাখের আনন্দ ছড়িয়ে দিতে সমবেত হন দুই শতাধিক প্রবাসী বাংলাদেশি।
অনুষ্ঠানের সূচনা হয় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে। এরপর সভাপতি ক্লারা রোজারিওর নেতৃত্বে এবং সহ সাধারণ সম্পাদক লিলি মজুমদার , সাংস্কৃতিক সম্পাদক সুলেখা পাল ও উদীচী জ্যামাইকা শাখার সাংস্কৃতিক সম্পাদক ফুলু রায় চৌধুরীর প্রাণবন্ত সঞ্চালনায়, সুচরিত দত্তের তত্তাবধানে সারাবেলা ছড়িয়ে পড়ে এক বৈশাখী আবহ।
সভাপতির বক্তব্যে ক্লারা রোজারিও বলেন, “বৈশাখ আমাদের জীবনের এক অনুপম অনুভূতির নাম। প্রবাসেও আমরা এই শেকড়ের টানকে জিইয়ে রাখবো।”
সাধারণ সম্পাদক কল্লোল দাশ তাঁর বক্তব্যে বলেন, “উদীচী মানেই মানবতার গান, বৈশাখ মানেই নতুন দিনের প্রত্যাশা।” এছাড়া আলোচনায় যাঁরা ছিলেন ডা. আজিজুল হক, ড : ধনঞ্জয় সাহা, প্রগ্রেসিভ ফোরামের হাফিজুল হক, জ্যামাইকা উদীচীর সভাপতি আশীষ রায় , সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও শিক্ষক সুচরিত দত্ত তাঁদের বক্তব্যে বৈশাখের ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ধারাবাহিকতার কথা তুলে ধরেন। তারা বলেন, প্রবাসে থেকেও নিজেদের সংস্কৃতির চর্চা অব্যাহত রাখা প্রতিটি প্রবাসী বাংলাদেশির দায়িত্ব।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চ্যানেল আই টিভির নিউইয়র্ক ব্যুরো প্রধান রাশেদ আহমেদ, ছড়াকার ডা. অনিমিতা চৌধুরী সাহা, মঙ্গল শোভাযাত্রা উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব মোজাহিদ আনসারী, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিককর্মী শাহ্ জে চৌধুরী, জাকির হোসেন বাচ্চু, রামদাস ঘরামী, পলাশ ঘোষ, দেবব্রত ঘোষ, রুপক নন্দী এবং কৃষ্ণা দে প্রমুখ। এরপর বর্ষবরণের এই আয়োজনে ছিল নাচ, গান, গীতিনাট্য, ফ্যাশন শো এবং আবৃত্তি। উদীচীর শিল্পীদের পরিবেশনায় ছিল বাংলা লোকসংগীত, রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলগীতি ও সমসাময়িক গান।
রঙিন পোশাকে সজ্জিত শিশু-কিশোরদের অঙ্কন প্রতিযোগিতা ছিল অন্যতম আকর্ষণ। যেখানে তারা বৈশাখের দৃশ্যপট, মঙ্গল শোভাযাত্রার রঙিন মুখোশ ও বাংলার গ্রামীণ জীবনচিত্র তুলে ধরে। শিশুদের মুখে ছিল প্রাণের উচ্ছ্বাস আর চোখে ছিল বাঙালিয়ানার গর্ব।
আবৃত্তিতে প্রাণবন্ত করেন তরুণ শিল্পীরা, যেখানে শোনা যায় জীবনানন্দের নরম স্বর, কিংবা সুফিয়া কামালের দীপ্ত উচ্চারণ।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে ছিল এক বিশেষ গীতি নাট্য পরিবেশনা, যেখানে উপস্থাপিত হয় গ্রামবাংলার নববর্ষ পালনের ঐতিহ্য ও চেতনার গল্প। ছোট ছোট ছড়া ও কবিতার মধ্য দিয়ে ফুটে ওঠে বাংলা ভাষার মাধুর্য এবং মাটির গন্ধ।
শেষভাগের বৈশাখী অনুষ্ঠানের শেষে পরিবেশন করা হয় বৈশাখের ঐতিহ্যবাহী খাবার। অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয় পান্তা-ইলিশ, শুঁটকি ভর্তা, ডাল, আলুভর্তা, চিতই পিঠা ও নানান বৈশাখী পদ দিয়ে। পান্তা ভাতের গন্ধ আর ইলিশের স্বাদ যেন মুহূর্তেই সবাইকে ফিরিয়ে নিয়েছিল গ্রামের নববর্ষের দিনে।
অনুষ্ঠানে উদীচী যুক্তরাষ্ট্র সংসদের বর্তমান কমিটির সভাপতি: ক্লারা রোজারিও ,সহ-সভাপতি: শরাফ সরকার, আব্দুল্লাহ চৌধুরী, বাবুল আচার্য্য ,সাধারণ সম্পাদক: কল্লোল দাশ
সহ সাধারণ সম্পাদক লিলি মজুমদার ,কোষাধ্যক্ষ: সুমন দে ,
সম্পাদকমণ্ডলীর সুলেখা পাল, গোলাম মর্তুজা, হীরো চৌধুরী, রাবেয়া আক্তার, মোঃ রফিকুল ইসলাম।
সম্মানিত সদস্য আলীম উদ্দিন, খোরশেদুল ইসলাম, জাকির হোসেন বাচ্চু, আশীষ রায়, ডা. আজিজুল হক, কামাল চৌধুরী, কাবির হোসেন, মোর্শেদুল হাকিম শুভ্র, ইলা চন্দ, আবু রায়হান, মোঃ আলীম আহমদ, উত্তম কুমার সাহা, সুপর্ণা সরকার রীমা, দীপু দাশ এবং স্নিগ্ধা আচার্য্য উপস্থিত ছিলেন।
উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর এ আয়োজন প্রমাণ করল, প্রবাসে থেকেও বাংলা সংস্কৃতির শেকড় অটুট রাখা সম্ভব। বৈশাখের এই প্রাণের উৎসবে প্রবাসীরা ফিরে পেলেন শেকড়ের টান, সংস্কৃতির উষ্ণ আলিঙ্গন। নিউইয়র্কের মাটিতে বৈশাখের এই জয়গান ছিল এক অনন্য সাংস্কৃতিক অনুষঙ্গ, যা বছরের পর বছর মনে থাকবে প্রবাসী বাংলাদেশিদের হৃদয়ে।